বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫ || ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ২১:৩৫, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

পারভেজ হত্যা: দুই তরুণীকে খুঁজে বের করতে বললেন বিচারক

এজহারনামীয় আসামি হৃদয় মিয়াজী ৭ দিনের রিমান্ডে

এজহারনামীয় আসামি হৃদয় মিয়াজী ৭ দিনের রিমান্ডে

রাজধানীর বনানীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে হত্যার ঘটনায় নাম আসা দুই তরুণীকে খুঁজে বের করতে বলেছেন আদালত। আদালত বলেন, ‘তাঁরা স্পটে ছিল, মেয়েগুলোর ভূমিকা ছিল। তাঁদের খুঁজে বের করুন।’

এ মামলায় গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজীর রিমান্ড শুনানিতে বুধবার এ আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্যাহ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক এ এস এম মাঈন উদ্দিন হৃদয়কে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চান। 

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, এ আসামি এজাহারনামীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিডিও ফুটেজ ও সিসি ক্যামেরা দেখেই এ মামলার সঙ্গে আসামির সংশ্লিষ্টতার কথা জানা যায়। পরে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ নৃশংস হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বা অন্য কোনো কারণ আছে কি না সেটা জানার জন্য আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী তাসলিমা মিনু রিমান্ডের বিরোধিতা করেন।  তিনি বলেন, এ হত্যার সঙ্গে আমার মক্কেলের কোনো সম্পর্ক নেই। পারভেজ তার ডিপার্টমেন্টের কেউ না। মেয়েদেরও তিনি চেনেন না।

পরে বিচারক মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “মেয়েরা কোথায়? তাদের ধরেননি কেন?

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এ মামলায় সন্দেহ করার মতো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাননি। সিসি ক্যামেরায় তাঁদের দেখা যায়নি। আবু জর পিয়াস অর্গানাইজ করেছে। আমরা তাকে খুঁজছি।

এরপর বিচারক বলেন, মামলার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁরা স্পটে ছিল, মেয়েগুলোর ভূমিকা ছিল। তাঁদের খুঁজে বের করেন।

শুনানি শেষে আদালত ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে হৃদয় মিয়াজীকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

শিক্ষার্থী ও তদন্তসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯ এপ্রিল বিকালে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের দোকানে শিঙাড়া খাচ্ছিলেন দুই তরুণী। তাদের একজন প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পিয়াসের বান্ধবী। পারভেজ সেখানে ছিলেন, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন।

তিনি কেন হাসলেন– এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পিয়াসের বান্ধবী। এ সময় পিয়াস, মেহেরাজ, মাহাথিরের সঙ্গে পারভেজ ও তাঁর বন্ধুদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নজরে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আব্দুস সালাম মণ্ডলসহ কয়েকজন শিক্ষক উভয়পক্ষকে ডেকে মীমাংসা করে দেন। কিন্তু তাঁরা বের হয়ে যাওয়ার পর ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে বহিরাগতরা এসে পারভেজের বুকে ছুরি মেরে হত্যা করে।

পারভেজ হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আট আসামির হলন–প্রাইমএশিয়ার শিক্ষার্থী মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জর গিফারী পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০) এবং তাদের বহিরাগত সহযোগী সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজী (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। এজাহারনামীয় আট আসামির মধ্যে হৃদয় মিয়াজী গ্রেফতার হলেও অন্যরা এখনও পলাতক। 

এ ঘটনায় আল কামাল শেখ, আলভী হোসেন জুনায়েদ ও আল আমিন সানি নামে আরও তিনজন গ্রেপ্তার আছেন। ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাঁদের।

সেই ২ ছাত্রীকে বহিষ্কার: পারভেজ হত্যার ঘটনায় আলোচিত ২ নারী শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ক্যাপ্টেন মোবাশ্বের আলী খন্দকার গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান। একই সঙ্গে পারভেজের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বহিষ্কৃত দুজন হলেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ফাতেমা তাহসিন ঐশী (আইডি নম্বর ২৪১০৫০০১৩) এবং ইংরেজি বিভাগের ফারিয়া হক টিনা (আইডি নম্বর ২৪১০৪০০৪৮)। মোবাশ্বের আলী খন্দকার জানান, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি চিঠির মাধ্যমে ২ ছাত্রীর বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। এরপর প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে আমরা তাদের সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পারভেজ হত্যায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিক পর্যায়ে ২ শিক্ষার্থীর সম্পৃক্তদ্ধতার ইঙ্গিত পেয়েছে। সেজন্য তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশি প্রতিবেদন বা চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত তাদের ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব স্থায়ীভাবে বাতিলসহ প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ